মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপি সরকার গঠন করলে  প্রথম পর্যায়ে ৫০ লক্ষ পরিবার কে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হবে— কয়ছর এম আহমেদ হাসিনার বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি ভোটাররা একটি সুস্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন— কয়ছর আহমদ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন: কয়ছর এম আহমদ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে — কয়ছর এম আহমেদ শিগগিরই সরাসরি দেখা হবে: তারেক রহমান হারুন-বিপ্লবের সাত পদক বাতিল “রক্তের আখরে লেখা জুলাই বিজয় “ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ও শহীদদের স্মরণে জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল জগন্নাথপুরে উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন সংগঠনের জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত

বুলেটের মুখে বুক পেতে দিয়েছিলেন একজন

বুলেটের মুখে বুক পেতে দিয়েছিলেন একজন

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দীনকে শেষবারের মতো কল দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কর্নেল জামিলকে বলেছিলেন, তাকে আক্রমণ করা হয়েছে, ধানমণ্ডির ৩২নং বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। পরে লাইন কেটে যায়।

যে কালরাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, নগরীকে ঘিরে ধরেছিল অনিশ্চয়তা এবং দেশের নেতৃত্ব অচল হয়ে পড়েছিল, সে রাতে কর্নেল জামিল তার দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি। তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কল করেন এবং তাদের সেনা পাঠাতে বলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টকে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার নির্দেশ দেন এবং তৎক্ষণাৎ ৩২নং রোডের বাড়ির দিকে ছুটে চলেন।

শান্তভাবে নিজের পিস্তল খাপে রেখে স্ত্রী-সন্তানদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বিপদ। কীভাবে আমি না গিয়ে পারি?’

জিপে চড়ার আগে স্ত্রীর প্রতি তার শেষ কথা ছিল, ‘আমার কন্যাদের খেয়াল রেখো।’ অন্ধকার ভেদ করে গাড়ি চলল ৩২নং রোডের বাড়ির দিকে।

সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছলে পিজিআর কনভয় কর্নেল জামিলকে থামান। তিনি কারণ জানতে চান। তাকে বলা হয় সামনে সেনা ইউনিট রয়েছে এবং গোলাগুলি চলছে। তিনি সেনাদের সামনে এগোনোর জন্য বোঝাতে চেষ্টা করলেন। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তিনি জিপে চেপে বসলেন এবং নিজে গাড়ি চালিয়ে ৩২নং রোডে যাওয়ার চেষ্টা করলেন।

গুলি করা হল বীর সেনানী কর্নেল জামিলকে। গাড়ির ভেতর লুটিয়ে পড়লেন তিনি। শাহাদতবরণ করলেন কর্নেল জামিল; যিনি অন্যদের মতো বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন। নীতি ও কর্তব্যের প্রতি অবিচল আনুগত্য কর্নেল জামিলকে দান করেছে শহীদের মর্যাদা। যে রাতে অনেক সাহসী মানুষ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগেছেন, সে রাতে কর্নেল জামিল একচুলও টলেননি তার কর্তব্যবোধ থেকে। সাহসিকতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন কর্নেল জামিল। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন কর্তব্যবোধকে।

১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দুপুর প্রায় ২টা পর্যন্ত কর্নেল জামিলের পরিবার জানত না কী ঘটেছিল তার ভাগ্যে। ফোন করলেন জেনারেল শফিউল্লা; যাকে ভোরে কর্নেল জামিল বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন। ফোন ধরলেন মিসেস জামিল। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ মিসেস জামিলকে দিতে গলা ধরে আসছিল জেনারেল শফিউল্লার। চলে গেলেন বাংলাদেশের এক খাঁটি দেশপ্রেমিক।

কর্নেল জামিল অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তার আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বে মুগ্ধ হয়ে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাকে তার সামরিক সচিব নিযুক্ত করেছিলেন।

কর্নেল জামিল এবং কেএম শফিউল্লা একসঙ্গে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। অনেক বছর পর বন্ধুর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কেএম শফিউল্লা বলেন, ‘সেই দিনগুলোয় জামিল ভাই, আমি এবং কিছু বাঙালি অফিসার পাকিস্তানে ছিলাম এবং আমাদের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সে সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল উদীয়মান অবস্থায়। পাকিস্তানের অধিকাংশ জনসংখ্যা পূর্ব বাংলার হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখেছি সেনাবাহিনীতে আমাদের প্রতিনিধিত্ব কত কম ছিল। যখনই আমাদের সাক্ষাৎ হতো আমরা এ বিষয়ে কথা বলতাম। আমাদের মধ্যে জামিল ভাইয়ের জাতীয়তাবোধ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং মাঝে মাঝে তিনি ক্রোধে বেপরোয়া হয়ে যেতেন।

২০১০ সালে কর্নেল জামিলকে মরণোত্তর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল র‌্যাঙ্ক দেয়া হয় এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচানোর জন্য যে অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

আমাদের দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে অনেক দেরিতে এ সম্মান দেয়া হয় কর্নেল জামিলকে। কারণ এ দেশে স্বজনপ্রীতির লেন্সের মাধ্যমে দেখা হয় ত্যাগ ও সাহসিকতাকে। আমাদের জাতির জন্য কর্নেল জামিলের মহত্ত্বের এ এক বিলম্বিত স্মরণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ মহান বীরের বিরল আত্মত্যাগ প্রতিফলনেরও সময় এসেছে।

কর্নেল জামিলের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহমিনা এনায়েত বলেন, ‘বাবার আত্মা শান্তিতে থাকবে এবং আমিও মরে যাব। আমার বাবা ছিলেন এক সৎ কর্মকর্তা। আমি গর্বিত আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।’

জামিলের অমর আত্মদান বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে আমাদের মাঝে। দেশের ডাকে তিনি সাড়া দিয়েছেন এবং কর্তব্য পালনের জন্য হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। জাতি যখন দাঁড়িয়েছিল অনিশ্চয়তার বাঁকে, তখন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল দেখিয়েছেন অনুপম নৈতিক সাহসিকতা, যা তাকে করেছে মহান এবং সত্যিকারের নায়ক।

এনায়েতউল্লাহ্ খান : সম্পাদক, ঢাকা কুরিয়ার; এডিটর ইন চিফ, ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com